স্বপ্ন সম্পর্কিত
২০১৪ সালের আগস্ট মাসের দিকে কিছু আড্ডাবাজ তরুণের যুথবদ্ধ থাকার প্রয়াসকে সাংগঠনিক রুপ দিতে গিয়ে স্বপ্ন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতে এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য অত বিস্তৃত বা গোছালো কিছু ছিল না। কিন্তু উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মত। “সবাই মিলে কিছু একটা করব”- প্রধান লক্ষ্য বলতে গেলে এটাই ছিল। “কিছু একটা”-টা কী সেটা কারো কাছে স্পষ্ট ছিল না। মূলত একসাথে থাকার তাড়না থেকে সমিতি টাইপ একটা সংগঠন গড়ে উঠে। বেশ সাড়াও মিলে। খুব দ্রুতই প্রায় ৫০ জন যুক্ত হয়ে যায়।
সময়ের পরিক্রমায় নানা বাস্তবতার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠাতাদের অনেকেই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। ঝরে পড়েছেন। আবার কেউ কেউ শক্ত নাবিক হয়ে হাল ধরেছিলেন ও আছেন। অন্যদিকে নতুন স্বপ্নবাজ অনেকেই যুক্ত হয়েছেন যারা বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কান্ডারির ভুমিকা নিয়েছেন। ফলে উত্তাল সময় পাড়ি দিয়েও স্বপ্ন আজ সমাজে ইতিবাচক শক্তি হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য প্রস্তুত।
বলা বাহুল্য, প্রতিষ্ঠাতা সেইসব আড্ডাবাজ তরুণদের দিন শুধু আড্ডাবাজিতে কাটত না। সমাজের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট ছিল। ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য তাদের ডেডিকেশন ছিল। তারা ছিলেন অসাম্প্রদায়িক উদার ও প্রাণখোলা। তাদের সেই সামষ্টিক মনোভাবের প্রতিফলন খুব ভালোভাবেই তারা স্বপ্নে প্রোথিত করেছেন।
আমরা মনে করি, আজকে এতগুলো উদার অসাম্প্রদায়িক প্রচারবিমুখ মানুষের প্লাটফর্ম সারা বাংলাদেশে বিরল। এখানে গণতান্ত্রিক চর্চা দৃষ্টান্ত স্থাপনীয়, শুদ্ধ মানুষ হওয়ার সমবেত প্রয়াস সমগ্র মানব জাতির জন্য আশাজাগানিয়া।
শুরুতে সঞ্চয়ের হার ছিল মাসে জনপ্রতি ১০০০ টাকা। পরবর্তীতে সেটা ২০০০ টাকা করা হয় ২০১৭ সালে। শুরু থেকে যারা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে আসছেন বর্তমানে তাদের প্রতি জনের মোট সঞ্চয় দাড়িয়েছে ১৮৮০০০/-(২০২২ সাল পর্যন্ত)
প্রারম্ভিক সময়ে স্বপ্নদ্রষ্টাদের আড্ডার মূল কেন্দ্র ছিল রাউজান কলেজের সামনে অবস্থিত “রাউজান ইংলিশ স্কুল” এর তখনকার ক্যাম্পাসটি। অস্থায়ী অফিসও স্থাপন করা হয় ঐখানে। অনেক গুলো কমিটি সভা, সাধারণ সভা এবং কয়েকটি এজিএম অনুষ্ঠিত হয় ওখানে।
২০১৭ সালে শুধুমাত্র সমিতির সদস্যদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে লোন প্রকল্প গ্রহণ করে স্বপ্ন ব্যাংকিং এর দিকে যাত্রা করে। আমাদের অনেক সদস্য ব্যবসা, ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও চিকিৎসার মত গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপক উপকৃত হয়। বাংলাদেশে একমাত্র আমরাই করোনাকালীন, গ্রাহকদের কোনরূপ দাবি বা অনুরোধ ছাড়াই- নিজ তাগিদে, ঋণগ্রহীতাদের ইন্টারেস্ট মওকুফ করেছি যা মানবিক ব্যাংকিং এর পথে প্রথম ধাপ। এটার মাধ্যমে সমাজে আরো অবদান রাখার সুযোগ আছে। বর্তমানে আমরা সীমিত আকারে সমিতির সদস্যদের বাইরেও ঋণ দিচ্ছি।
২০২১ সালে এগ্রো প্রকল্প শুরু করার পর স্বপ্ন নতুন মাত্রা লাভ করে। একটি দৃশ্যমান প্রকল্পের যে স্বপ্ন সদস্যরা লালন করতেন এটার মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। এর ফলে শুধু ২০২২ সালেই আমাদের সাথে নতুন করে যুক্ত হন ২১ জন সদস্য, যেখানে অতীত রেকর্ড ছিল এক বছরে সর্বোচ্চ ভর্তিকৃত সদস্য ছিল ১২ জন মাত্র। তাছাড়া ‘এগ্রো’ কে কেন্দ্র করে যে আড্ডা জ্ঞানচর্চা ও শেয়ারিং শুরু হয় তা আমাদের সমিতির মান নতুন উচ্চতায় তুলে দিয়েছে। এটার বদৌলতেই আজকে আমরা ভিন্ন মাত্রার সম্পূর্ণ নতুন ধারণার আবাসন প্রকল্পের কথা ভাবতে পারছি।